জবা
Hibiscus flower image |
China rose - hibiscus how to plant - hibiscus potting mix in Bengali
জবা অতি পরিচত একটি ফুল । প্রায় প্রত্যেক ফুল প্রেমী কখনও না কখনও এই গাছ বসিযে থাকবেন ।
এবং প্রায় অধিকাংশ বাড়িতেই এই ফুলগাছ বসানো হয়ে থাকে পূজার ফুল হিসাবে ব্যবহৃত করার জন্য ।
এই ফুলের সাথে ভারতীয় সংস্কৃতি তথা ধর্মীয় মান্যতা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে ।
সেই সঙ্গে ভারতীয় আয়ুর্বেদে এর বিশেষ গুরুত্বও আছে ।
-----------------------------------------------------------------------
If you read this article in English please CLICK hare
-----------------------------------------------------------------------
इस लेख को हिंदी में पड़ने के लिए इसपर CLICK करे
-----------------------------------------------------------------------
তথ্য ও ইতিহাস
➧ বৈজ্ঞানিক নাম - Hibiscus rosa-sinensis
➧ পরিবার - Malvaceae
➧ শ্রেণী - Eudicots
➧ মহাজাতি - Hibiscus
➧ উপজাতি - Hibisceae
১৭৫৩ সালে কার্ল লিনিয়াস ( Carl Linnaeus ) তাঁর স্পেসিস প্ল্যান্টেরামে ( Species Plantarum ) হিবিস্কাস রোসা-সিনেসিসের নামকরণ করেছিলেন ।
Hibiscus flower image |
জবা গাছ উচ্চতায় ৮ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে । এবং প্রস্থে ৫ থেকে ১০ ফুট পর্যন্তও হতে দেখা যায় ।
এটি একটি ঘন ঝাড়যুক্ত ফুলের গাছ । পাতাগুলি গাঢ় সবুজ এবং খাঁজকাটা হয়ে থাকে ।
এর প্রচুর প্রজাতির গাছে নানান আকারের বিভিন্ন রঙের ফুল হতে দেখা যায় ।
এই ফুলগুলির ব্যাস ২ ইঞ্চি থেকে ৭ ইঞ্চি পর্যন্ত হয় ।
জবা গাছ গ্রীষ্মমণ্ডল এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডলিয় অঞ্চলে খুব ভালো ভাবে বেড়ে ওঠে । কেননা জবা ১০ ডিগ্রির নিচের তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না ।তবে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে কেউ কেউ জবা গাছকে গ্রীনহাউসের মধ্যে রাখে ।
নানা দেশে ও অঞ্চলে একে বিভিন্ন নাম ডাকা হয় । যেমন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে জবা , হিন্দিতে গুরহল ও জবাকুসুম, মালয়েশিয়াতে বুঙ্গা রায়া ( Bunga Raya ), হাইতি তে রোস কায়েন ( rose kayenn ), ফিলিপিন্সে গুমামেলা ( Gumamela ) এছাড়া একে চায়না রোস ( China rose ), হাওয়াইয়ান হিবিসকাস ( Hawaiian hibiscus ), রোস মালো ( Rose mallow ) নামেও ডাকা হয়ে থাকে ।
জবা হল ( Hibiscus ) হাইতির জাতীয় প্রতীক, এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং নিউও ( Solomon Islands and Niue ) সহ দেশগুলির জাতীয় ফুল ।
হিবিস্কাস রোসা-সিনেসিস ( Hibiscus rosa-sinensis ) হল মালেয়শিয়ার জাতীয় ফুল ।
এবং হিবিস্কাস সিরিয়াকাস ( Hibiscus syriacus ) হল দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় ফুল ।
ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় এর চাষ হয়ে থাকে । যেখান থেকে ফুল সংগ্রহ করে নানান প্রান্তে এই ফুলের বিক্রি করা হয় ।
Hibiscus flower image |
ব্যবহার ও উপকারিতা
লাল জবা তথা রক্ত জবাকে হিন্দু ধর্মের দেবী মহাকালী'র প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে ।
মহাদেবী কালী'র পূজা অর্চনা এই লাল জবা দিয়েই করা হয় ।এক প্রজাতির জবা, কেনাফ ( Hibiscus cannabinus ) নামে পরিচিত, যেটি কাগজ তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত করা হয়ে থাকে ।
জবা সাবদারিফার ( Hibiscus sabdariffa ) দিয়ে তৈরি চা বিশ্বের বহু দেশে নানান নামে পরিচিত এবং এটি গরম এবং ঠান্ডা উভয়ই পরিবেশন করা হয় । পানীয়টি তার লাল রঙ, তীক্ষ্ণ স্বাদ এবং অনন্য গন্ধের জন্য সুপরিচিত। সেই সঙ্গে ভিটামিন সি সামগ্রীর কারণে এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর হয়ে থাকে ।
বিভিন্ন দেশে জবাফুলের তৈরী এই ধরণের পানীয়কে নানা নাম ডাকা হয় যেমন - Bissap, Gul e Khatmi, Agua de jamaica, Orhul, Roselle, Sorrel, Soobolo, Karkade, ইত্যাদি ।
জবা ফুলকে ( Hibiscus rosa-sinensis ) ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অনেক গুণসম্পর্ণ বলে বর্ণনা করা রয়েছে । চুলের সমস্যা, সর্দি কাশিতে এর প্রয়োগ করা হয় ।
এছাড়া আয়ুর্বেদের বিভিন্ন ঔষধে এর কম বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
Hibiscus flower image |
আরও কিছু তথ্য
সারা পৃথিবীতে এর প্রায় ৬৫০ বেশি প্রজাতি পাওয়া যায় ।
নানা ধরণের প্রজাতি এবং তার রং, আকার, এই সব কিন্তু প্রাকৃতিক ভাবে হয়নি ?
আমরা জবা হিসাবে যে যে গাছ গুলি নার্সারি থেকে কিনে এনে লাগাই তার অধিকাংশই মানুষের তৈরী করা ।
গ্রাফটিং ( Grafting ) টিসু কালচার ( Tissue culture ) এবং দুই প্রজাতির ফুলের পরাগ রেনু একে অপরের সাথে মিলিত করে নতুন প্রজাতি ও নতুন রঙের জবা গাছ তৈরী করা হয়ে থাকে ।
যেগুলিকে আমরা সাধারণত ব্যাঙ্গালোর জবা , পুনে ভ্যারাইটি , অস্ট্রেলিয়ান , বা হাইব্রিড জবা নামে চিনি ।
গাছ লাগানো
যেমনটা আমরা জানি অনেকেই জবা গাছ নিজের বাগানে অথবা টবে বসিয়ে থাকেন তাই আজ এই গাছ লাগানো সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেব
প্রথমে মাটি তৈরী
- মাটি -- ৫০ %
- সার -- ৩০ %
- নদীর বালি - ১০ %
- কোকোপিট - ১০ %
- হাড়গুঁড়ো ২৫০ গ্রাম প্রতি টব
এই সবগুলি ভালো করে মিশিয়ে নিন--এবার আপনার মাটি তৈরী ।
জবা গাছ বসানোর জন্য কম করে ১০ ইঞ্চির টব ব্যবহার করা উচিত । গাছ এক দেড় বছর পুরানো হয়ে গেলে তখন ১২ বা ১৫ অথবা আরো বড় কোনো জায়গায় প্রতিস্থাপন করতে পারেন ।
যেকোনো গাছ বসানোর জন্য সবসময় মাটির টব ব্যবহার করবেন ।
জবা গাছ বসানোর জন্য কম করে ১০ ইঞ্চির টব ব্যবহার করা উচিত । গাছ এক দেড় বছর পুরানো হয়ে গেলে তখন ১২ বা ১৫ অথবা আরো বড় কোনো জায়গায় প্রতিস্থাপন করতে পারেন ।
যেকোনো গাছ বসানোর জন্য সবসময় মাটির টব ব্যবহার করবেন ।
প্রথমে টবটিকে নিন । টবের নিচে যে ফুটো আছে তার ওপরে একটি খোলামকুচি রেখে তার ওপর কিছুটা বালি দিয়ে তবেই তৈরী করা মাটি দেবেন । এতে কি হয় অত্যাধিক জল সহজেই বেরিয়ে যায় আর আপনার গাছের সুসাস্থ্য বজায় থাকে ।
এবার জবা গাছের চারা লাগিয়ে দিযে অল্প জল দিয়ে দিন ।দেখাশোনা
এই গাছকে সবসময় সূর্যের আলোর মধ্যে রাখা উচিত ।
জবা গাছে খুব বেশি জল কখনই দেবেন না । বেশি জল হয়ে গেলে এর শিকড় পচে গিয়ে পুরো গাছটিই মারা যায় বিশেষ করে হাইব্রিড জবা গুলি । তবে যখন গাছে অনেক ফুল ধরে থাকে তখন একটু বেশি জলের প্রয়োজন হয় ।
বর্ষাকালে একটু খেয়াল রাখবেন খুব বেশি বৃষ্টির সময় টব টিকে গাছসুদ্ধু কাত করেও রেখে দিতে পারেন ।
বর্ষাকালে একটু খেয়াল রাখবেন খুব বেশি বৃষ্টির সময় টব টিকে গাছসুদ্ধু কাত করেও রেখে দিতে পারেন ।
কিছুদিন পর পর টবের মাটি একটু খুঁড়ে দেবেন । তাতে কি হয় মাটি ফাঁপা থাকলে গাছ সুস্থ থাকে ।
রোগ ও তার প্রতিকার
জবার মূলতঃ নিম্নলিখিত রোগগুলিই হয়ে থাকে যেমন --
Spider mites -- এটা এক ধরণের ক্ষুদ্র পোকা যে সাধারণত পাতার নিচে থাকে । জবা ডালের ডগায় ছোট ছোট জাল তৈরি করে । এদের আক্রমণ হলে পাতা হলদে হয়ে যায় ও কুঁকড়ে যায় ।
প্রতিকার -- Rolex, Oberon, Xmite এর মধ্যে যেকোনো একটির ১/২ ml ১ লিটার ঠান্ডা জলে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে স্প্রে করবেন । এটি ১০/১২ দিন অন্তর চালিয়ে যেতে হবে যতদিন না পুরোপুরি প্রতিকার হচ্ছে ।
Mealybugs -- এটি হল সব থেকে ভয়ানক রোগ, এরা গাছের সমস্ত রস শুষে নিতে থাকে । সাদা রঙের এই পোকাটি সম্পূর্ণ গাছটিকেই নষ্ট করে দিতে পারে যদি শুরুতেই এর প্রতিকার না করেন ।
প্রতিকার -- Dxtar ১ গ্রাম ৫ লিটার জলে এছাড়া Acephate ১ গ্রাম ১ লিটারে জলে ভালো করে গুলে নিয়ে স্প্রে করবেন । এটিও ৫/৭ দিন ছাড়া দিতে পারেন ।
আরও একটি উপায় হল নিম তেল ৫ ml + কাপড় কাচার পাউডার ১ গ্রাম = ১ লিটার জলে গুলে স্প্রে করবেন ৭/৮ দিন ছাড়া যতদিন না পুরোপুরি রোগ নির্মূল হয়
Aphids -- এগুলিও খুব ছোট আকারের হয় । কালো সাদা হলদে সবুজ নানা রঙের হয়ে থাকে । এরা সাধারণত কুঁড়ির ওপর থাকে এবং কুঁড়ির অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে যার ফলে কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে উঠতে বাধা পায় ।
প্রতিকার -- এর ক্ষেত্রে Rolex, Oberon, Xmite এর যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন । পদ্ধতি একই
Gall midge -- এটি ক্ষুদ্র হলুদ রঙের এই পোকাটিও কুঁড়ির ওপর আক্রমণ করে । যার ফলে কুঁড়ি ফুল হয়ে ফোটার আগেই হলুদ হয়ে ঝরে পরে যায় ।
প্রতিকার -- ভালো হয় হলুদ হয়ে যাওয়া কুঁড়ি গুলো সংগ্রহ করে সেগুলিকে একটি জিপ লক ব্যাগে সীল করে এখুনি তা আবর্জনায় ফেলে দিন যাতে তারা আবার নতুন জীবনচক্র থেকে বিরত থাকে ।
Dieback -- এটিও একটি মারণ রোগ , ছত্রাক ( Fungus ) লাগার ফলে গাছের ডাল উপরের দিক থেকে ধীরে ধীরে পচে যেতে থাকে । ( এই রোগটি গোলাপ গাছেও হয় )
প্রতিকার -- এর সব থেকে ভালো উপায় হল যেখান থেকে এই রোগ শুরু হয়েছে তার একটু নিচে থেকে সেই ডালটি ছেঁটে ফেলে দেয়া । এবং সেই কেটে ফেলা ডালের অংশে যেকোনো ছত্রাকনাশক পাউডার ( যেমন Saaf , Bavistin ইত্যাদি ) লাগিয়ে দেবেন ।
আর এক ধরণের পোকা হয় যে গুলি পাতা খেয়ে ফেলে , সে ক্ষেত্রে Plethora ১ ml ১ লিটারে জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে পারেন । এছাড়া উপরোক্ত বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রেও এটি ভালো কাজ দেয় ।
এছাড়া White flies, Thrips, ইত্যাদি রোগ ও হয়ে থাকে । যেগুলি উপরোক্ত ঔষধ ব্যবহারের করলে গাছ সুস্থ হয়ে ওঠে ।
তাছাড়া প্রতিদিন গাছে জল দেয়ার সময় যদি সম্পূর্ণ গাছটিকে পরিষ্কার জলের স্প্রে করে ধুইয়ে দেন তাহলে অধিকাংশ রোগ হতে পারেনা ।
Hibiscus flower image |
ছাঁটাই
এমনটা মনে করা হয় যে জবা গাছ ছাঁটাই করলে তাতে তুলনামূলক ভাবে ফুল কম ফোটে ।
তবু যদি ছাঁটাই করেন তবে খুব কম মাত্রাতেই করবেন । ছাঁটাই করার সেরা সময় হ'ল আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসছাঁটাই করার পর সেই জায়গায় ছত্রাকনাশক পাউডার লাগিয়ে দেবেন ।
শেষান্তে
কারও কারও ফুলগাছে কিছুদিন পর ফুল হওয়া কম হয়ে যায় বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ।আমার মনে হয় এর কারণ নিয়মিত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা ।
শুরুতে তো এর ফল ভালোই দেখা যায় কিন্তু কিছু দিন পর থেকেই টবের মাটি খারাপ হতে শুরু করে দেয় ।
আমি নিজে এটা উপলব্ধি করেছি ।
নিয়মিত রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে মাটি রুক্ষ ও শক্ত হয়ে যায় যার ফলে গাছের শিকড় ঠিক ভাবে ছড়াতে পারেনা এবং জল ধারণ করার ক্ষমতাও কমে যায় ।
সেজন্যই আমি নিজে এর ব্যবহার করিনা ও কাউকে এটার পরামর্শও দিই না ।
আমি সব সময় জৈব সারের ব্যবহারই করি ।
মনপছন্দ রান্নার পদ সম্পর্কে জানার জন্য এই ব্লগটি পড়ুন Tasty with Healthy
অন্য লেখা পড়ার জন্য এগুলিতে ক্লিক করুন - রজনীগন্ধা এডেনিয়াম বাগানবিলাস বদ্রি পাখি
অন্য লেখা পড়ার জন্য এগুলিতে ক্লিক করুন - রজনীগন্ধা এডেনিয়াম বাগানবিলাস বদ্রি পাখি
Khub valo laglo
ReplyDelete